বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা শহরের আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে, সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ভবনটি দূর থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, কিন্তু ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদে ও দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ার চিত্র। দেখা মেলে আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল। দোতলা এই ভবনে বাইশ কক্ষের পাঁচটিই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট সতেরটি কক্ষের প্রায় সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও।
পৌর শহরের ডিবি রোডে ১ নম্বর ট্রাফিক মোড় এলাকায় ১৯৬৬ সালে এক একর জমির ওপর আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৮ সালে ২২ কক্ষের দ্বিতল ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এখানেই স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে স্কুলটিতে কলেজ শাখা চালু করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট তিনতলা ভিতবিশিষ্ট তিন কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। পরে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অর্থায়নে দোতলার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে তিনতলা ভিতবিশিষ্ট তিন কক্ষের আরও একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে স্কুল শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন আর কলেজ শাখায় রয়েছে ৩শ’ ৫০ শিক্ষার্থী। স্কুল শাখায় শিক্ষক রয়েছেন ২০ জন এবং কলেজ শাখায় শিক্ষক আছেন ১১ জন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৯৬৬ সালে নির্মিত এ বিদ্যালয় ভবনে ২০০৮ সালে ত্রুটি দেখা দেয়ার পর ধীরে ধীরে শ্রেণি কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। বৃষ্টির সময়ে ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে মেঝেতে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। ফলে সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পাঠদান চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ সতেরটি কক্ষে চলছে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৬৮ সালে স্কুলের উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে বাইশ কক্ষের দুইতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। এরমধ্যে নীচতলার একটি কক্ষে অধ্যক্ষ বসেন, দুইটি সহকারী শিক্ষকদের বসার কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ, একটিতে লাইব্রেরি, একটি নামায ঘরসহ সাতটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এই সাতটি শ্রেণিকক্ষের দুইটি ২০১৬ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। অবশিষ্ট পাঁচটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উপরতলার নয়টি কক্ষের তিনটিকে ২০০৮ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। অবশিষ্ট ছয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও কক্ষগুলোতে এখনও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।
দশম শ্রেণি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া জানায়, ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ্ মাঈনুল ইসলাম শিল্পু জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যেকোনো সময় বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের এ দুরাবস্থা থেকে উত্তরণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রাও।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com